যেই ১০টি উক্তি বদলে দেবে তোমার জীবন
ভাল কথা, ভাল উপদেশ কখনো পুরনো হয় না। একটি ইতিবাচক জিনিসের আবেদন রয়ে যায় চিরকাল। ঘরের দেয়ালে একটি উক্তি টাঙানো, তুমি হয়তো দিনের পর দিন সেটি দেখে আসছো কোনদিন কিছু মনে হয়নি, হঠাৎ একদিন কোন বিশেষ পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে বাণীটি একদম তোমার হৃদয়ে গেঁথে গেল। অবাক হয়ে ভাবলে, তাই তো! এতদিন কেন চোখে পড়েনি ব্যাপারটা?
এতদিন চোখে পড়েছে ঠিকই, কিন্তু হৃদয়ে প্রবেশ করেনি। আজ সেটা করলো। একটি উক্তি তোমার জীবন বদলে দিতে পারে চিরদিনের জন্য। জীবনের মোড় বদলে দেয়া এমন দশটি উক্তি নিয়েই আজকের এই আয়োজন।
১.
কিছু কিছু মানুষ সবসময়ই থাকে আমাদের চারপাশে যারা কিভাবে কিভাবে যেন সবকিছুতেই ভয়াবহ রকমের সফল! ক্লাসে পরীক্ষায় প্রথম হচ্ছে, দৌড় প্রতিযোগিতায় সবার আগে ফিনিশ লাইনে তারা, বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায় তাদের প্রজেক্ট পুরস্কার জিতছে- তুমি নখ কামড়ে ভাবছো একটা মানুষের সবদিকে এত প্রতিভার ছড়াছড়ি কীভাবে হয়? আমাদের আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী আন্টিরা আবার এককাঠি সরেস-“ও যেই চালের ভাত খায়, তুমিও সেই চালের ভাত খাও, ও পারলে তুমি পারো না ক্যান?”
এইসব কথায় কখনো মন খারাপ করার কিছু নেই। তুমি জানো তোমার কী কী প্রতিভা আছে এবং সেটা দিয়ে একদিন পৃথিবী বিজয় করে ফেলা সম্ভব।পরীক্ষার খাতায় কম মার্কস পাওয়া দিয়ে আসলে কিছু আসে যায়না। কখনো হীনম্মন্যতায় ভুগবে না, ভুগে কি আদৌ কোন লাভ হয়? আত্মবিশ্বাস আর আত্মমর্যাদাটুকু ধরে রাখতে পারলে জীবনে আর কিছু লাগে না।
২.
একটা ঈগলছানা কিভাবে কীভাবে যেন দলছাড়া হয়ে মুরগির খোঁয়াড়ে পড়ে গেল। সেখানে একটি মুরগির বড় দয়া হলো বেচারার দুরবস্থা দেখে, আপন সন্তানের মত দরদ দিয়ে লালন-পালন করে বড় করে তুললো সেটিকে। ঈগলটি এখন একটু বড় হয়েছে, গায়ে গতরে তার চারপাশের মুরগিদের চেয়ে ঢের বড় সে। কিন্তু, চলাফেরায় স্বভাবে একদম মুরগিদের মতোই। তাদের সাথেই থাকে, তাদের সাথেই ঘুমায়, তাদের মতোই ভীতু সে।
একদিন তার ভাইদের সাথে যাচ্ছিলো সে, হঠাৎ আকাশে কি যেন একটা উড়ে গেল। তাকিয়ে দেখে কী বিশাল একটা পাখি, কী তার দৃপ্ত পাখার ঝাপটানি, কি সম্রাটের হালে সে উড়ে বেড়াচ্ছে আকাশে- দেখে ঈগলটির একদম চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল! মা মুরগির কাছে গিয়ে বললো, “এটা কী পাখি? আমরা কি এভাবে উড়তে পারি না?”
“কী বোকার মত কথা বলছো! আমরা কীভাবে উড়বো? ওটা তো ঈগল পাখি, ওভাবে উড়া আমাদের জন্য অসম্ভব!”
ছোট্ট ঈগলটি একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে পালের সাথে হাঁটতে লাগলো। বেচারা কোনদিন বুঝলোও না তারও রাজার মতো আকাশে উড়বার কথা ছিল।
একবার ভেবে দেখো তো নিজেকে এই ঈগলটির জায়গায় কল্পনা করে?
৩.
“অমুক তো ভাই অনেক মেধাবী! তার সাথে কি আমাদের তুলনা চলে?” এই কথাটি যে কত জায়গায় কতবার শুনেছি হিসেব নেই। এই কথাটি শুনলে কেন যেন আমার ভীষণ রাগ হয়, ব্যাপারটা অনেকটা খেলতে নামার আগেই পরাজয় মেনে নেওয়ার মতো। অমুক খুব ট্যালেন্টেড বুঝলাম, কিন্তু আমার চেয়ে কতগুণ মেধাবী সে? আমি যদি প্রতিদিন তার থেকে ডাবল খাটুনি করি কেন আমি তার চেয়ে ভাল করবো না?
তুমি চাইলে অতি অবশ্যই ক্লাসে ফার্স্ট হতে পারবে, অবশ্যই চমৎকার লিখতে পারবে, প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা থাকলে বিজয় অবশ্যই আসবে, আসতে বাধ্য।
৪.
একটু হিসেব করে দেখো তো আজকে সারাদিনে কীভাবে কেটেছে তোমার? হয়তো ক্লাসে গিয়েছো, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়েছো, ঘুরাঘুরি খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি। আচ্ছা এবার অন্যকিছু ভাবা যাক। আচ্ছা বলো তো, তোমার কী কী শখ আছে? জীবনে বড় হয়ে কী হওয়ার ইচ্ছা?
নিজেকে একবার জিজ্ঞেস করো, সেই শখ বা স্বপ্নটা পূরণ করার জন্য আজকে কী করেছো তুমি? প্রতিদিন বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা, খেলা দেখা, সোশাল মিডিয়া ইত্যাদিতে বিপুল পরিমাণ সময় অপচয় হচ্ছে- এভাবেই কি কেটে যাবে একটি জীবন?
আজকের দিনটিতে হোক নতুন করে শুরু সবকিছুর।
৫.
ক্লাসে প্রায়ই এমনটা হয়- একটা জিনিস তুমি বুঝোনি, এবং মনে হচ্ছে তুমি একাই এই দলে, বাকি সবাই জিনিসটা বুঝেছে তাই জিজ্ঞেস করারও সাহস পাচ্ছো না- পাছে মানুষ হাসাহাসি করে! এটা যে কতবড় বোকামি তুমি কি বুঝতে পারছো? আজকে তোমাকে নিয়ে হয়তো সবাই হাসাহাসি করলো, দুইদিন পর কি ব্যাপারটা কেউ মনে রাখবে? অথচ জিজ্ঞেস করে বুঝে নেওয়ার পর জিনিসটা কিন্তু সারাজীবনের জন্য শিখে ফেলছো তুমি! সুতরাং আর নয় বোকামি, প্রশ্ন করতে শেখো, জানতে শেখো। না জানায় কোন লজ্জা নেই, কিন্তু জানার চেষ্টা না করাটা বড় লজ্জার ব্যাপার।
৬.
প্রতিদিন খবরের কাগজে, সোশাল মিডিয়ায়, টেলিভিশনে অনেক দুর্ভাগা মানুষের খবর আসে। খেতে না পেয়ে মরমর শিশু, সব হারিয়ে নিঃস্ব কোন বৃদ্ধ- সেটা দেখে আমাদের বড় মায়া হয়, আমরা জিব নেড়ে চুকচুক করে সহানুভূতিসূচক একটা শব্দ করে চ্যানেল পাল্টাই। একটু কল্পনা করো তুমি পা ভেঙ্গে রাস্তায় পড়ে আছো।
কেউ তোমার ছবি তুলে ফেসবুকে দিল সেটি সাথেসাথে ভাইরাল হয়ে গেছে হাজার হাজার লাইক উঠছে সবাই আহারে টাইপ কমেন্ট করছে- যতক্ষণ না কেউ এসে তোমাকে রাস্তা থেকে তুলে হাসপাতালে নিচ্ছে এত হাজার হাজার মানুষের সহানুভূতিতে তোমার পায়ের যন্ত্রণা কি এতটুকু কমেছে? তুমি কী ভাবছো সেটা বিষয় না, যতক্ষণ না মাঠে নেমে সেটিকে সত্যি করছো এই ভাবাভাবির কোন মূল্য নেই।
পৃথিবীর খুব সুন্দর একটি ব্যাপার হচ্ছে জীবনের কোন দুঃখই চিরস্থায়ী না
৭.
একটি প্রতিযোগিতামূলক কাজ যদি সহজ হয় তাতে বিশেষ আগ্রহের কিছু নেই। কাজটি যত কঠিন আনন্দ তত বেশি- কারণ, খাটুনি সইতে না পেরে কিছুক্ষণ পরই একটু একটু করে মানুষজন হাল ছেড়ে দিতে শুরু করবে। কয়জন থাকবে নাছোড়বান্দা তারা দাঁত কামড়ে পড়ে থাকবে জিনিসটি নিয়ে, এবং দেখা যাবে আস্তে আস্তে তারা বাদে বাকি সবাই ঝরে গেছে! এভারেস্টের চূড়ায় এজন্যই সবাই পৌঁছাতে পারে না, বারবার আছাড়-পিছাড় খেয়েও কিছু মানুষ ঝুলে থাকে, শেষ পর্যন্ত বিজয় নিশান তারাই উড়িয়ে দেয়।
সাফল্যের দুইটা না তিনটা না, একটামাত্র উপায়। সেটা হচ্ছে লেগে থাকা, কামড়ে ধরে থাকা, ঝুলে থাকা।
৮.
আমার সাথে ক্লাসে ১২০ জন ছাত্র-ছাত্রী আছে যাদের সবাই অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী এবং তুখোড় মেধাবী। এখন আমরা একই ক্লাসে একই সাথে আছি কিন্তু দশ বছর পর ব্যাপারটি সম্পূর্ণ বদলে যাবে- জীবনের দৌড়ে সবাই একসাথে আগাতে পারে না, আমার সাথের বন্ধু হয়তো একটি কোম্পানির CEO হবে, আরেক বন্ধু হয়তো সেই কোম্পানিরই সামান্য কর্মচারী হবে।
এটাই জীবন, সবাই কম-বেশি সমান সুযোগ পেয়েছে- কেউ সেটিকে কাজে লাগিয়ে বহুদূর এগিয়ে যাবে কেউ আবার মুখ থুবড়ে রাস্তায় পড়ে থাকবে। তুমি কি একদিন চাকরি দিবে নাকি চাকরি করবে সেটি কিন্তু তোমার প্রতিদিনের কাজগুলোই নির্ধারিত করে দেবে। আজকের দিনটি কিন্তু আর কোনদিন ফিরে পাবে না, এই অমূল্য সময়টুকু কাজে লাগাচ্ছো তো?
৯.
একটি মজার ব্যাপার কি জানো, ভর্তি পরীক্ষায় যারা আজ আশানুরূপ জায়গায় টিকতে না পেরে মাথা কুটে মরছে- দশ বছর কিন্তু তাদের একটুও দুঃখ থাকবে না বিষয়টি নিয়ে। পরীক্ষায় রেজাল্ট ভয়াবহ খারাপ হয়েছে, ভালোবাসার মানুষটি তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে- তুমি ঘর অন্ধকার করে শুয়ে আছো, বুকের ভেতর ছুরি দিয়ে চিরে ফেলার মত একটা যন্ত্রণা হচ্ছে- পাঁচ বছর পর এই যন্ত্রণাটির কথা তোমার মনে থাকবে না।
পৃথিবীর খুব সুন্দর একটি ব্যাপার হচ্ছে জীবনের কোন দুঃখই চিরস্থায়ী না, একশ বছর আগে যেই মানুষটি মারা গিয়েছিল দুঃখে তার আত্মীয়রা কেঁদে বুক ভাসিয়েছিলো- সেই মানুষটিকে এখন কারও মনে নেই পর্যন্ত। সুতরাং যত ঝড়-ঝাপটাই বয়ে যাক না কেন তোমার উপর, যত বুকভাঙ্গা হাহাকারই আসুক না কেন- মনে রেখো এই বেদনা ক্ষণস্থায়ী, মেঘ কেটে ঝলমলে রোদ্দুর আসবেই।
১০.
জীবনের সবচেয়ে সুন্দর জিনিসটি হচ্ছে স্বপ্ন দেখতে জানা। মুক্তিযুদ্ধে হাজার হাজার আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত প্রশিক্ষিত হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সেকেলে অস্ত্র নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা লড়ছিলো যেখানে জয়ের সম্ভাবনা বলতে গেলে ছিল না। কিন্তু, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের একটি স্বপ্ন ছিলো সেটি হচ্ছে দেশ শত্রুমুক্ত হবে বিজয়ের নিশান উড়বেই। এই স্বপ্নটিকে সম্বল করে তারা কিভাবে কিভাবে এত বড় ভয়াবহ হানাদার বাহিনীকে হটিয়ে দিল সেটি অসম্ভব গৌরবের একটি অধ্যায়।
ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে তাঁরা প্রমাণ করে গেলেন স্বপ্ন দেখতে জানলে সত্যি সত্যি অসাধারণ কিছু করে ফেলা সম্ভব। প্রতিদিন সকালে উঠে এই ব্যাপারটি মাথায় রেখো- হয়তো আজকেই খুব চমৎকার একটি জিনিস ঘটতে পারে তোমার জীবনে, তুমি কি অনুভব করছো সেটি?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন