রবিবার, ৭ মে, ২০১৭


আসলে প্রযুক্তির এমন কিছু রহস্যময় দিকও আছে যা কিনা আধুনিক প্রযুক্তি অনেক চেষ্টা করেও বের করতে পারেনি। আমি প্রাচীন কালের কথা বলছি। সে সময়ে প্রযুক্তির ছোঁয়া ছিল না বললে ভুল হবে। সে সময়েও প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল, এমনকি সে সময়ের প্রযুক্তি, গবেষণা ইত্যাদি এখনকার ঝানু প্রযুক্তিবিদদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিয়েছে এবং দিচ্ছে।কিন্তু কোন সমাধান আজ পর্যন্ত বের হয়নি। চলুন এমন কিছু দৃষ্টান্ত দেখে আসি।

প্রযুক্তির কিছু রহস্যময় দৃষ্টান্ত যা এখনো সমাধিত হয়নি

১. Stradivari Violins:

১৭ শতকের খুব বিখ্যাত ছিল Stradivari violins।আর এর নির্মাতা ছিল ইটালির Stradivari family।ভায়োলিন ছাড়াও গিটার ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রও বানাত তারা।এটা ছিল ১৬৫০-১৭৫০ সাল পর্যন্ত।তখনকার যুগে Stradivari Violins ছিল অনেক দামী এবং আভিজাত্যের প্রতীক।কারণ ঐ সময়ে পৃথিবীর অন্য কেউ এত সুন্দর সাউন্ড কোয়ালিটির ভায়োলিন বানাতে পারতনা।এক কথায় আনপ্যারারাল।এখন দুনিয়া জুড়ে ৬০০টির মত ভায়োলিন রয়েছে যা অমূল্য।কিনতে গেলে হয়ত নিলামে যেতে হবে।
Stradivari instruments বানানোর কৌশল ছিল Stradivari পরিবারের গোপন বিষয় যা একমাত্র জানত Antonio Stradivari এবং তার দুই ছেলে Omobono এবং Francesco... তারা তিনজন মারা গেলে বন্ধ হয়ে যায় সব উৎপাদন।অনেক বাদ্যযন্ত্র বিশারদ চেষ্টা করেছে নতুন করে Stradivari Violins বানাতে কিন্তু সবাই ব্যর্থ।কেউ পারেনি সেই Strdivari Violin এর ধারে কাছে যেতে।আজকের দিন পর্যন্ত Stradivari Violins বানানোর কৌশল এক রহস্যের আধার হয়ে আছে যা হারিয়ে গেছে Stradivari পরিবারের তিন পুরুষ সদস্য মারা যাবার সাথে সাথে।

২. Nepenthe:

প্রাচীন গ্রীক ও রোমান সাম্রাজ্য শিক্ষা,সংস্কৃতি ও প্রযুক্তিতে ছিল অনেক এগিয়ে।তাদের অনেক কিছু ছিল ঈর্ষা করার মত।চিকিৎসা বিদ্যায়ও ছিল তাদের অনেক অগ্রগতি। প্রাচীন গ্রীক সাম্রাজ্যের একটি বিস্ময়কর ঔষধ ছিল Nepenthe,যাকে বলা হত anti-depressant বা “chase away sorrow.”যার উল্লেখ পাওয়া যায় হোমারের অডিসিতেও।অনেকে বলে এটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক বা fictional,কিন্তু ইতিহাসবিদদের কথা হল যে এটা সত্যি।মিসরেও এর প্রচলন ছিল, যাকে বলা হত “a drug of forgetfulness”. এখনকার দিনে যা opium বা laudanum এর মত কাজ করে। কিন্তু এটা মোটেই নেশা জাতীয় দ্রব্য ছিল না।
Nepenthe তৈরির কৌশল নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে কিন্তু ঐ সময়ে কি উপাদন দিয়ে Nepenthe তৈরি করা হত তা এক অজানা রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে।

৩. The Antikythera Mechanism:

আর্কেওলজির এক বিস্ময় হল The Antikythera Mechanism, এটি ব্রোঞ্জের তৈরি। উদ্ধার করা হয় ১৯০০ সালের দিকে গ্রীসের সমুদ্র উপকূল থেকে।এটি ৩০ টি গিয়ার,ডায়াল এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি।একটি ডুবন্ত প্রাচীন জাহাজের মধ্যে পাওয়া যায় এটি।বিজ্ঞানীদের ধারনা এটির তৈরি করার সময়কাল ছিল 1st বা 2nd century BC তে।এটির কাজ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা না পাওয়া গেলেও বিজ্ঞানীদের অনুমান করেন এটা এক ধরনের ঘড়ি জাতীয় যন্ত্র যা দিয়ে গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান এবং আলোক-বর্ষ গণনা করা হত।
১৪ শতকের কিছু লেখায় এই The Antikythera Mechanism সম্পর্কে জানা যায়।কিন্তু কোথাও এর গঠন পক্রিয়া নিয়ে কিছু লেখা নেই।ফলে The Antikythera Mechanism থাকলেও বের করা যায়নি এর তৈরি রহস্য।

৪. The Telharmonium:

The Telharmonium ধরা হয় দুনিয়ার প্রথম ইলেক্ট্রনিক মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট। এর টোনহুইল দিয়ে সিন্তেথিক মিউজিক্যাল নোট তৈরি করা যেত যা তারের মাধ্যমে লাউডস্পিকারে শোনা যেত।১৮৯৭ সালে এটি তৈরি করেন Thaddeus Cahill, এটা ছিল তৎকালীন দুনিয়ার সব থেকে বড় বাদ্যযন্ত্র যার ওজন ছিল ২০০টন আর রাখার জন্য বড় রুমের দরকার হত।এটার ছিল একগাদা বাটন সহ কীবোর্ড এবং পায়ের প্যাডেল।প্রথম প্রদর্শনেই মানুষের মন জয় করে নেয় এর মনোমুগ্ধকর আওয়াজের জন্য।
কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হয় এর খরচ এবং আয়তনের জন্য।তাছাড়া এটি চালনায় মানুষের শক্তিও খরচ হতে থাকে অনেক।আর Thaddeus Cahillও কাউকে এর গঠন সম্পর্কে না জানিয়ে একাই চেষ্টা করতে থাকেন এর থেকে ভাল কিছু করার।মাত্র তিনটি Telharmonium ছিল তখন আর তাই এটার সম্পর্কে অনেক আগ্রহ থাকলেও কেউ জানতে পারেনি এটা বানানোর প্রযুক্তি।

৫. Damascus Steel:

1100-1700 AD পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে খুব শক্ত একধরনের ধাতু ব্যবহার করা হত।যা পরিচিত ছিল Damascus steel নামে।এটা দিয়ে মুলত ছুরি ও তলোয়ার বানানো হত। Damascus steel দিয়ে বানানো ছুরি বা তলোয়ার যেমন ছিল শক্ত তেমন ধারাল এবং সাথে সাথে নমনীয়।আর তাই এর খ্যাতি ছিল বিশ্বব্যাপী।
১৭৫০ সাল পর্যন্ত ছিল এই Damascus steel এর স্বর্নযুগ।কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়নে তলোয়ার বা ছুরির ব্যবহার যেমন কমতে থাকে তেমনি কমতে থাকে ভারত এবং শ্রীলংকা থেকে এর কাচামালের যোগান।ফলে যারা এর বানানোর পদ্ধতি জানত তারা চলে যায় অন্য পেশায় ফলে তারাও কাউকে আর কোথাও লিপিবদ্ধ করে যায়নি এর তৈরি করার নিয়ম। আর এভাবে কোথাও লিপিবদ্ধ না থাকার কারনে কালের গর্ভে হারিয়ে যায় Damascus steel এর নির্মাণ প্রণালি অথচ অনেক গবেষণা হয়েছে তা উদ্ধারের জন্য।

৬. Roman Cement:

আধুনিক কংক্রিট উন্নততর হয় ১৭০০ সালের দিকে,আর এখনতো সিমেন্ট,বালি,পানি আর ইটের টুকরা মিশালে কংক্রিট তৈরি হয়।কিন্তু এটা কংক্রিট তৈরির ইতিহাস নয়। প্রাচীন যুগে পারসিয়ান, মিশরীয় আর রোমানরা জানত কংক্রিট তৈরির ফর্মুলা।কিন্তু রোমানদের তৈরি কংক্রিট ছিল সারা দুনিয়ার বিখ্যাত।তারা burnt lime, পানি আর পাথর একসাথে মিশিয়ে তৈরি করত কংক্রিট যার গাঁথুনি ছিল খুবই মজবুত।আর তাই তারা নির্মাণ করেছিল the Pantheon, the Colosseum, the aqueducts, আর the Roman Baths.
সব থেকে আশ্চর্যের ব্যাপার ছিল এই সিমেন্ট যারা বানাত কেউ লিখে রাখেনি এর প্রস্তুত প্রনালি,যারা জানত তারাও কালের গর্ভে হারিয়ে গেল। ফলে কোথাও জানা যায়নি সেই প্রযুক্তির কথা।ইতিহাসবিদদের সব থেকে বড় প্রশ্ন হল কেন হারিয়ে গেল এর উৎপাদন প্রক্রিয়া।আর এর হারিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রচলিত আছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

৭. Greek Fire:

হারিয়ে যাওয়া প্রযুক্তির মধ্যে অন্যতম রহস্যময় বিষয় হল Greek Fire, যা ব্যবহার করত Byzantine Empire এর সৈনিকরা। এটা এমন এক “sticky fire” ছিল যা পানির মধ্যেও একটানা জ্বলত।এর সবথেকে বহুল ব্যবহার হয় ১১ শতকে। প্রথম দিকে এটি বড় জারের মধ্যে ঢুকিয়ে গ্রেনেডের মত শত্রুর দিকে ছুড়ে মারা হত, তারপর এটি ব্যবহার হয় যুদ্ধ জাহাজে। জাহাজের সামনে ব্রোঞ্জের পাইপ ফিট করে সেই পাইপের মধ্য দিয়ে শত্রুর জাহাজে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হত।
Byzantine Empireএর শাসন আমলের পর কমতে থাকে এর ব্যবহার।এক সময় তা হয়ে যায় ইতিহাস।কিন্তু পড়ে এটা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে কিন্তু আসলেই কি কি মিশিয়ে এটি তৈরি হত তা এখনও একটি বিস্ময়ের বিষয় হয়ে দাড়িয়ে আছে সবার কাছে।

৮. Pyramid Of Egypt:

এই জিনিসটার ব্যাপারে বিশদ বিবরণ লিখতে গেলে আপনারা আমারে জুতা নিয়ে মারতে আসবেন। আমি জানি। তাই এটা নিয়ে বিশদ কিছু লিখব না। পিরামিডের ব্যাপারে তো আপনারা জানেনই। যিশু খ্রিস্টের জন্মেরও প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে মিসরে গড়ে উঠেছিল এক অসাধারণ সভ্যতা। নীল নদের তীরে সভ্যতায় গড়ে উঠেছিল সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন রহস্যমণ্ডিত পিরামিড। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এত প্রাচীন হলেও সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে একমাত্র পিরামিডই এখনো পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।আজকের আধুনিক বিজ্ঞানীদের কাছেও পিরামিড এক অজানা রহস্য। যার কাঠামো আধুনিক বিজ্ঞানের সব শাখায়ই খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আর্কিটেকচারাল হিসেবে এ ধরনের কাঠামো সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প প্রতিরোধক এবং স্থায়ী হয়ে থাকে। সম্প্রতি দেখা গেছে যে, পিরাপিড আসলে একটা রেশনাল স্ট্রাকচার। বিশাল সব পাথর কেমন করে শত শত ফুট ওপরে তোলা হয়েছিল জানে না কেউ। জানে না কেমন করে কাঁটা হয়েছিল পাথরগুলো। কারণ পাথরগুলোর ধার এতই মসৃণ যে, অতি উন্নত যন্ত্র ছাড়া যেটা সম্ভব নয়। এখানেই শেষ নয়, মৃতদেহকে দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় মমি করে রাখত। এ কাজে তারা বিশেষ কিছু রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করত। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানীরা এখনো ধরতে পারেননি তাদের সেই পদ্ধতি।
এখনকার ঝানু ঝানু আর্কিটেক্টরা মাথা চুলকান যখন এই পিরামিড নিয়ে ভাবতে বসেন। পিরামিড শুধু মিশরে আছে তাই নয়। চীনের সিচুয়ান প্রদেশে অবস্থিত রয়েছে ৪৫ ফুট লম্বা ৩১ ফুট উঁচু ৩৯ ফুট চওড়া একটি পিরামিড। আলপিছ নামক স্থানে পাওয়া গেছে একটি হিমবাহু কবর। সাইবেরিয়ার জমে থাকা তুষারের নিচে পাওয়া গেছে একটি হিমবাহু কবর। সাইবেরিয়াতে পাওয়া গেছে তুষারের মধ্যে কবর বা মামি জেরিকোতে রয়েছে পিরামিডের আদলে নির্মাণ করা ১০ হাজার বছর আগেকার কবর বা মামি। চীনের গোবি মরুভূমিতে পাওয়া গেছে অত্যধিক গরমে গলে যাওয়া কবর বা লাশ, যা প্রায় ১২ হাজার বছর আগের।আফ্রিকার নরিয়া লাপাতা মরুভূমি অঞ্চলে আবিষ্কার করা হয়েছে বেশ কয়েকটি পিরামিড, যা মিসরের পিরামিডের আদলে তৈরি করা। মধ্য আমেরিকাতে লাখ লাখ পিরামিডের সন্ধান পাওয়া গেছে।
এদিকে আবার মেক্সিকোতে পাওয়া গেছে ১ লাখ পিরামিড। যার মধ্যে অনেক পিরামিড আছে, যা এখনও কেউ ধরেই দেখেনি।এই পিরামিডের বহর দেখলে মনে হয় তারা বিশ্বাস করতো যে এই মরা লাশ কোন না কোন দিন জেগে উঠবে। তাই তার সাথে দেয়া হত খাবার-দাবার, এমনকি সোনা-রুপা ইত্যাদি দিয়ে ভরিয়ে দেয়া হত। (যদি এখনকার সময় হইতো তাইলে তো পিসি, নেট, গ্যালাক্সি এস৫ দিয়া রাইখা দিত মনে হয়। একটু মজা নিলাম। মনে কিছু নিয়েন না।)

৯. Ninjas:

নিনজা হল এক ধরণের গুপ্তঘাতক। নিঞ্জাদের প্রচলন কবে থেকে শুরু হয় তা সঠিক করে কেউ বলতে পারেনি। কেউ কেউ বলেন ১৪শ-১৫শ শতাব্দীতে তাদের জাপানে দীক্ষা দেয়া হত এবং বিভিন্ন কাজে নিয়োগ দেয়া হত। আবার কিছু কিছু উৎস বলে তাদের প্রচলন শুরু হয় ১২ শতকে প্রাচীন চীনে। অর্থাৎ, চীনের প্রাচীর বানানোর আগেই তাদের "Forbidden City" তে গুপ্তঘাতকের অথবা গুপ্তচরবৃত্তির কাজ দেয়া হত। কিন্তু এমন জল্পনা-কল্পনা থাকলেও তাদের নিয়ে সঠিক কিছু কেউ বলতে পারেনি।
তারা অপরাজেয় নিঃশব্দ যোদ্ধা ছিল। যদিও তারা প্রকাশ্যে কারো কাছে ধরা দিত না। তাদের ক্ষমতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, নিঃশব্দে চলা, ছায়াতে মিলিয়ে যাওয়া, অনেক উঁচুতে লাফিয়ে পার হওয়া, পানিতে হাঁটা ইত্যাদি। আপনি যদি "Ninja Hattori" কার্টুনটি দেখে থাকেন তো বুঝবেন আমি কি বলছি। এবং কেউ এটা আজগুবি মনে করবেন না। আগের নিনজারা এমনটাই করতে পারতো। মুহূর্তে ছায়াতে গায়েব হয়ে যেতে পারতো। তারা অনেকটা প্যাঁচার মত ছিল। দিনের বেলা তারা নিষ্ক্রিয় থাকতো। তাদের সময় ছিল রাতে। রাতে তারা বের হত এবং হত্যাযজ্ঞ চালাত। অন্ধকারই তাদের প্রিয় ছিল। বিভিন্ন নেতা অথবা মাননীয় ব্যাক্তি যদি কাউকে খুন করতে চাইত তবে তারা নিনজা কে ভাড়া করত এবং কার্জউদ্ধার করত। তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল নান-চাকু, কাটানা, মাকিবুশি, শুরিকেন, ইয়ুমি ইত্যাদি।
তাদের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা ছিল তা হল কোন ভাবে যদি তারা আঘাত প্রাপ্ত হত তবে নিজেরা নিজেদের চিকিৎসা করতে পারতো। আপনি কোন নিনজা কে যদি পেটে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন তো সে ওখান থেকে সরে যাবে। ৫ মিনিট পরে আপনার সামনে আসলে আপনি দেখবেন সেই দাগ একদম গায়েব। আজব হলেও এটা সত্যি। আগের দিনে যারা নিনজা প্রশিক্ষন নিত তাদের অনেক গোপনে রাখা হত। সাধারণ মানুষের বাইরে। এবং তাদের এমন ভাবে তৈরি করা হত যাতে সাধারণ মানুষের কাছে তাদের তথ্য না যায়। তাই নিঞ্জাদের এমন অনেক রহস্য আছে যা আধুনিক প্রযুক্তি কিনারা করতে পারেনি।

শেষ কথাঃ

পৃথিবী পুরোটাই রহস্যে ঘেরা এক চলমান দৃশ্য। সার্কাসে দর্শক সারিতে বসে আমরা অবাক হয়ে সার্কাস খেলা দেখি, তেমন এই পুরো পৃথিবীর দেখানো সার্কাসও আমাদের অবাক হয়েই দেখতে হবে। হয়তো প্রযুক্তির উন্নয়নে এক দিন না একদিন এর রহস্য কিনারা হয়ে যাবে। হয়তো আপনি বসে এটা পড়ছেন, আপনিও এই রহস্য বের করে ফেলবেন। তখন আশা করি অনেক অসাধ্য সাধন হবে।





















































পৃথিবীতে অনেক রহস্যময় জায়গা আছে যেগুলো সাধারণ জায়গার চেয়ে সম্পূর্ন ভিন্ন। এসব জায়গায় নিউটনের মহাকর্ষণ সূত্র ও কম্পাসও কাজ করে না। যার কারণে এসব এলাকায় ঘটে নানা রকমের অদ্ভুত ঘটনা। প্রখ্যাত ভূতত্ত্ববিদ ইভান স্যান্ডারসন এ রহস্যময় অদ্ভুত জায়গাগুলোর নাম দিয়েছেন ‘ভোরটেঙ্’। যার অর্থ ঘূর্ণিপাক। সাধারণত ঘূর্ণিপাক পানিরই হয়ে থাকে। তবে স্যান্ডারসনের এ ঘূর্ণিপাক পানির নয়, চেতনা-বোধের। তবে বিজ্ঞানী ব্রাড স্টেইজার এ রহস্যময় জায়গাগুলোকে অভিহিত করেছেন ‘উইন্ডো এরিয়া’ বলে। এরকমই কিছু জায়গা হচ্ছে কুখ্যাত বারমুডা ট্রায়াঙ্গল, রহস্যদ্বীপ বাল্ট্রা, রহস্যময় সাইলেন্স জোন, ক্যালিফোর্নিয়ার নর্থ শাস্তার অরিজনের একটি বিস্তীর্ণ এলাকা প্রভৃতি। তবে উইন্ডো এরিয়াই হোক আর ভোরটেঙ্ই যাই বলা হোক না কেন বিজ্ঞানীরা এ জায়গাগুলোর অস্বাভাবিকত্ব আর অসামঞ্জস্যতা নিয়ে গবেষণা করেছেন দীর্ঘ দিন ধরে। এ গবেষকদের অন্যতম একজন সাইকোলজিস্ট ড. স্টেনলি কিপার। তার মতে, এই এলাকায় প্রবেশ করলে মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে ব্যাপক আচরণগত পার্থক্য দেখা যায়। অনেক সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষকে এখানে এসে উদ্ভট ও অস্বাভাবিক সব আচরণ করতে তিনি দেখেছেন। এখানে পা রাখামাত্র যে কোনও মানুষেরই মনে হবে, সে ভিন্ন এক চেতনার জগতে গিয়ে হাজির হয়েছে। পৃথিবীতে এ ধরনের বেশকিছু রহস্যময় অঞ্চলের সন্ধান পাওয়া গেছে_ যেখানে মহাকর্ষণ সূত্র প্রায় অকার্যকর। বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় তারা এখানে আরও কিছু অদ্ভুত ব্যাপার প্রত্যক্ষ করেন। যেমন সমান উচ্চতাসম্পন্ন দুজন লোক এসব স্থানে গিয়ে পাশাপাশি দাঁড়ালে সামান্য দূর থেকে উত্তর দিকে ঘেঁষে দাঁড়ানো লোকটিকে খানিকটা খাটো বলে মনে হয়। ব্যাপারটি অবিশ্বাস্য সন্দেহ নেই, তবে বিজ্ঞানীরা এর ব্যাখা হিসেবে বলেন, একটি শক্তিশালী ম্যাগনেটিক ঘূর্ণিপাক কাজ করছে জায়গার ভেতর, যার প্রভাবে এসব অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে। এখানে পানি ঢাললে উপরের দিকে গড়াতে থাকে অথচ পানির ধর্মই হচ্ছে নিচের দিকে গড়িয়ে নামা। এখানে আগুন জ্বালালে কোনও কারণ ছাড়াই ধোঁয়া শঙ্খাকারে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে আকাশের দিকে উঠতে থাকে। এসব আজব ঘটনা ভোরটেঙ্গুলো ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও ঘটতে দেখা যায় না। এখানে কম্পাসের নির্দেশক কোনও একটি জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে পুরো এলাকায় কোনও জীবজন্তু নেই। নেই কোনও কীটপতঙ্গও। এ ধরনের রহস্যময় জায়গার আরেকটি হচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগরের ‘বাল্ট্র দ্বীপ’।

আসুন শোনা যাক রহস্যময় বাল্ট্রা দ্বীপের গল্প


প্রকৃতির বিচিত্র সৃষ্টি রূপে বেশ কিছু দ্বীপ অমীমাংসিত রহস্য হিসেবে আজও সৃষ্টি করে রেখেছে বিষ্ময়ের । এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বাল্ট্রা। মানববসতিশূন্য একটি দ্বীপ হচ্ছে বাল্ট্রা । ইকুয়েডরের গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের একটি বিশেষ দ্বীপ এটি । দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরের নিকটবর্তী ১৩টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত ম্যালাপোগোস দ্বীপপুঞ্জ আর এই ১৩টি দ্বীপের একটি হচ্ছে বাল্ট্রা।
বাল্ট্রা এখানকার অন্য ১২টি দ্বীপ থেকে একেবারেই অন্যরকম, অদ্ভুত এবং রহস্যময়। গ্রীষ্মমন্ডলীয় দ্বীপপুঞ্জ হওয়ায় প্রচুর বৃষ্টি হয় এই দ্বীপে । কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার কি জানেন ? বৃষ্টির এক ফোঁটাও পড়ে না বাল্ট্রাতে। কোন এক রহস্যজনক কারণে বাল্ট্রার অনেক ওপর দিয়ে গিয়ে অন্যপাশে পড়ে বৃষ্টি। বাল্ট্রার অর্ধেক পার হওয়ার পর বৃষ্টির ফোঁটা আর এগোয় না এক ইঞ্চিও । এখানকার প্রতিটি দ্বীপেই আছে সিল মাছ, ইগুয়ানা, দানবীয় কচ্ছপ, গিরগিটি সহ বিরল প্রজাতির পাখি শুধুমাত্র বাল্ট্রা বাদে।
বাল্ট্রা দ্বীপে নেই কোনও প্রাণী , উদ্ভিদ বা কীটপতঙ্গ । বাল্ট্রা আর পাশের দ্বীপ সান্তাক্রজের মাঝে তিন ফুট গভীর ও কয়েক ফুট চওড়া একটি খাল আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এ গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি পরের দ্বীপে এয়ারবেস স্থাপন করে ইউএস সরকার। ফ্রেন্সিস ওয়ানার ছিলেন এখানকারই একজন দায়িত্বরত অফিসার। এ দ্বীপপুঞ্জে থাকাকালীন বিভিন্ন অদ্ভুত ঘটনা আর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন তিনি। যেগুলো পরে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হলে রীতিমতো বিস্ময়ের ঝড় ওঠে। তিনি লিখেছেন, ‘জীবনের সবচেয়ে বড় বড় বিস্ময়কর ঘটনাগুলোর মুখোমুখি হয়েছি আমি বাল্ট্রা দ্বীপে গিয়ে।
একটা নয় দুটো নয়, একের পর এক অসংখ্য অবিশ্বাস্য সব ব্যাপার ঘটেছে আমার চোখের সামনে। বিস্ময়ে হতবাক আমি শুধু দৃষ্টি মেলে দেখেই গেছি এসব, কোনও যুক্তিযুক্ত উত্তর বা ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি। সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের একটি শক্তি কাজ করছে দ্বীপটির ভেতর। যার প্রভাবে ঘটেছে একের পর এক এসব রহস্যময় ও অবিশ্বাস্য ঘটনা। বাল্ট্রাতে এলেই অস্বাভাবিক আচরণ করে নাবিক বা অভিযাত্রীর কম্পাস। সবসময় উত্তর দিক-নির্দেশকারী কম্পাস এখানে কোনো সময় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। দিক-নির্দেশক কাঁটা ইচ্ছেমতো ঘুরতে থাকে অথবা উল্টোপাল্টা দিক নির্দেশ করে। আরেকটি রহস্যজনক ব্যাপার হলো বাল্ট্রা দ্বীপের ওপর বিমান থাকাকালীন সময়েও এমন অদ্ভুত আচরণ করে কম্পাস। আবার দ্বীপ পার হলেই সব ঠিক। বাল্ট্রার আরেকটি অদ্ভূত দিক হচ্ছে বাল্ট্রায় পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে কারও মাথা অনেক হালকা হয়ে যায়। অচেনা অজানা কোন এক জায়গায় হারিয়ে যাওয়ার আশ্চর্য অনুভূতি আচ্ছন্ন করে ফেলে মনকে। বেশিক্ষণ এ দ্বীপে থাকলে দ্বীপ থেকে চলে আসার পর কিছুদিন সেই আশ্চর্য অনুভূতি থেকে যায়। পরে অবশ্য আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। অদ্ভুত দ্বীপ বাল্ট্রায় কোন গাছ বা পশুপাখি নেই । কোনো পশুপাখি নাকি আসতেও চায় না এ দ্বীপে । দেখা যায় বাল্ট্রাকে এড়িয়ে পাশের দ্বীপ সান্তাক্রুজের ধার ঘেঁষে চলছে প্রাণীগুলো। শুধু কি তাই , উড়ন্ত পাখিগুলোও উড়তে উড়তে বাল্ট্রার কাছে এসেই ফিরে যাচ্ছে। দেখে মনে হয় যেন কোনো দেয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে ওরা। এই দ্বীপের রহস্যের কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা এ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশ্য এরিক ফন দানিকেন ও তার অনুসারীরা যথারীতি তাদের স্বভাবসুলভ দৃষ্টিভঙ্গিতে সেই পৃথিবীর বাইরের ভিন্নগ্রহের তথাকথিত মানুষদের টেনে এনেছেন। কিন্তু বিজ্ঞানীরা আজ পর্যন্ত এ রহস্যের কোন কূলকিনারা করতে পারেননি । প্রযুক্তিগত দিক দিকে বিশ্ব আজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা হয়ত একদিন এসব রহস্যের সমাধান মানুষের কাছে তুলে ধরবে। আমরা সেরকম আশা করতেই পারি । :)


বোভেট দ্বীপ
পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে রহস্যে ঘেরা বহু দ্বীপ-উপদ্বীপ। বোভেট নামে একটি দ্বীপ রয়েছে মেরু অঞ্চলে, সেই দ্বীপটিকে এযাবত্কালে সন্ধান পাওয়া দ্বীপের মধ্যে সবচেয়ে রহস্যময় আর দুর্গম বলা হয়। দ্বীপটিতে স্থলপথে যাওয়ার কোনো উপায় নেই, জলপথে যাওয়াও প্রায় দুঃসাধ্য ব্যাপার। রহস্যময় এ দ্বীপ সম্পর্কে যা কিছু জানা গেছে তা জানা হয়েছে কৃত্রিম উপগ্রহ ও বিমানের মাধ্যমে উপর থেকে। বোভেট দ্বীপে যে কখনো মানববসতি গড়ে উঠেছিল তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে ষাটের দশকের একটি পরিত্যক্ত লাইফ বোট দেখতে পাওয়া গেছে। কিন্তু দ্বীপের কোথাও লাইফ বোট ব্যবহারকারী কাউকে দেখা যায়নি।
এ দ্বীপটি নিয়ে এমন কিছু কথা প্রচারিত রয়েছে যার সত্যতা পাওয়া যায়নি। যেমন বলা হয়ে থাকে যে, বোভেট দ্বীপের পাশেই আরও একটি দ্বীপ ছিল। অথচ তেমন কোনো দ্বীপ ছিল কি না তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। দ্বীপটির আয়তন পঁচাত্তর বর্গমাইল। পুরোটা দ্বীপ বরফে ঢাকা। তাই উল্লেখযোগ্য কোনো প্রাণীও সেখানে নেই বলে মনে করা হয়। বিজ্ঞানীদের ধারণা, বোভেট দ্বীপে শুধু পেঙ্গুইন, শিল আর দুই-এক প্রজাতির সামুদ্রিক পাখির সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।

ফুটন্ত কাদা ( নিউজিল্যান্ড) Boiling Mud, New Zealand


নিউজিল্যান্ডের রোটোরোয়ায় অবস্থিত TAUPO লেকে ফুটন্ত কাদা-মাটি দেখতে পাওয়া যায়।গবেষকদের ধারনা,নদী ও লেকের পানি নির্দিষ্ট এই জায়গায় উত্তপ্ত পাথরের উপরে প্রবাহিত হয় বলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।এটি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হয়ে দাড়িঁয়েছে।
চলুন Boiling Mud এর কিছু ছবি দেখা যাক ।










নরকের দরজা (Door to Hell ) তুর্কেমেনিস্তান
তুর্কেমেনিস্তানের Darvaz শহরে অবস্হিত এটি একটি জ্বলন্ত গর্ত। জ্বলন্ত জায়গাটি Door to Hell নামে সুপরিচিত।নরকের দরজাটি ভয়ঙ্কর সুন্দর লাগে রাতে। তখন অনেক দূর থেকেই জায়গাটা তো দেখা যায়ই, এর শিখার উজ্জ্বলতাও ভালোমতো বুঝা যায়। সেখানকার উত্তাপ এত বেশি যে, কেউ চাইলেও ৫ মিনিটের বেশি সেখানে থাকতে পারবেন না।

১৯৭১ সাল থেকে জায়গাটি অবিরত দাউ দাউ করে জ্বলছে।কারাকুম মরুভূমিতে অবস্থিত অগ্নিমুখটির ব্যাস ৭০ মিটার ও গর্ত ২০ মিটার দীর্ঘ। যদিও এটি প্রাকৃতিক কোন গর্ত নয়। ১৯৭১ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রাকৃতিক গ্যাস সমৃদ্ধ দারউয়িজি এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধানের সময় অনুসন্ধানকারীরা গ্যাসবহুল গুহার মধ্যে মৃদু স্পর্শ করলে দুর্ঘটনাক্রমে মাটি ধসে পুরো ড্রিলিং রিগসহ পড়ে যায়। পরিবেশে বিষাক্ত গ্যাস প্রতিরোধ করার জন্য ভু-তত্ত্ববিদগণ তখন গ্যাস উদগীরন মুখটি জ্বালিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা আশা করেছিলেন যে, এর ফলে কয়েকদিনের মধ্যে গ্যাস উদগীরন বন্ধ হবে। কিন্তু তার আর হয়নি। গত ৪০ বছর ধরে অগ্নিমুখটি অনবরত জ্বলছে। ১৯৭১ সালে এখানে গ্যাস খনির সন্ধান মেলে। প্রাথমিকভাবে গবেষনা করে বিষাক্ত গ্যাসের ব্যাপারে গবেষকরা নিশ্চিত হন যার পরিমান ছিল সীমিত। সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, এই গ্যাস জ্বালিয়ে শেষ করা হবে ফলে এর বিষাক্ততা ছড়ানোর সুযোগ পাবে না। এরপর এখানে গর্ত করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু গবেষকদের অবাক করে দিয়ে তা এখনও অর্থাৎ ৪০ বছর ধরে একাধারে জ্বলছে। অথচ গবেষকরা নিশ্চিত ছিলেন যে, অল্প কয়েকদিন মধ্যে এই গ্যাস শেষ হবে এবং আগুন নিভে যাবে।





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন